মৈত্রেয়ী দেবী

মৈত্রেয়ী দেবী (১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪ - ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০) ছিলেন একজন বাঙালি কবি, লেখকঔপন্যাসিক। তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ন হন্যতে তাকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য ছাড়াও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।<ref name="মৈত্রেয়ী দেবী মানবকণ্ঠ">"মৈত্রেয়ী দেবী"দৈনিক মানবকণ্ঠ। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬ </ref>

মৈত্রেয়ী দেবী
মৈত্রেয়ী দেবী
মৈত্রেয়ী দেবী
জন্ম(১৯১৪-০৯-০১)১ সেপ্টেম্বর ১৯১৪
চট্টগ্রাম জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০(1990-02-04) (বয়স ৭৫)
কলকাতা, ভারত
পেশাকবি, লেখক, ঔপন্যাসিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারত
শিক্ষাস্নাতক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
সময়কালআধুনিক যুগ
ধরনকবিতা, উপন্যাস, স্মৃতিকথা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিউদিত
হিরন্ময় পাখি
ন হন্যতে
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
পদ্মশ্রী
সক্রিয় বছর১৯৩০-১৯৭৬
দাম্পত্যসঙ্গীড. মনোমোহন সেন (বি. ১৯৩৪-১৯৯০)

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাসম্পাদনা

মৈত্রেয়ী ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার বাবার কর্মস্থল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মায়ের নাম হিমানী মাধুরী রায়। তার বাবা ছিলেন একজন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। তার শৈশব কাটে বাবার বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী কলেজ<ref>"History of the College"। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ </ref> থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।<ref name="অনন্য সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী">দিনেশচন্দ্র জয়ধর (১ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "অনন্য সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী"এইবেলা। ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬ </ref>




পারিবারিক জীবনসম্পাদনা

মির্চা এলিয়াদ নামক এক বিদেশীর সাথে তার সম্পর্ক তার পরিবারকে বিশেষ ভাবে যখন নাড়া দেয় তখনি তারা তার বিয়ে ঠিক করেন।

১৯৩৪ সালে তিনি ড. মনোমোহন সেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মনোমোহন সেন ছিলেন একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।<ref name="বরিশালের প্রয়াত গুণীজন">চৌধুরী, রুসেলি রহমান (২০০৬)। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ঢাকা, বাংলাদেশ: ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স। </ref> তিনি মংপুতে সিনকোনা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ছিলেন ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ভেষজ সিনকোনা চাষ নিয়ে গবেষণা করেন। মৈত্রেয়ী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহভাজন হওয়ায় তারা মংপুতে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ীর আমন্ত্রণে ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সালে চারবার সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।<ref name="বরিশালের প্রয়াত গুণীজন" /><ref>মীর ওয়ালীউজ্জামান (৭ মার্চ ২০১১)। "পঞ্চম কাহন: ক্রিসমাসে দার্জিলিং"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬ </ref>

১৯৩২ সালে ইনি কবি অতুলপ্রসাদ সেনের কথায় ও সুরে "মধুকালে এল হোলি" গানটি এইচ এম ভি থেকে রেকর্ড করেন (রেকর্ড # এইচএমভি এন ৪০১৯). <ref>"মধুকালে এল হোলি, রাগ : কাফি, তাল : কাহারবা, কথা ও সুর : অতুলপ্রসাদ সেন, এইচএমভি এন ৪০১৯, সংগ্রাহক : শ্রী পার্থসারথী শিকদার" </ref>

সাহিত্য জীবনসম্পাদনা

তার সাহিত্যজীবন শুরু ষোল বছর বয়সে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উদিত ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ চিত্তছায়া। ১৯৪২ সালে রবীন্দ্রনাথের মংপুতে কাঠানো দিনগুলোর স্মৃতি ও তার সাথে আলাপচারিতা নিয়ে লিখেন স্মৃতিকথা মংপুতে রবীন্দ্রনাথ। বইটি টেগোর বাই ফায়ারসাইড নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। রবীন্দ্র বিষয়ক তার অন্যান্য বইগুলো হল স্বর্গের কাছাকাছি, কবি সার্বভৌম, রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে, রবীন্দ্রনাথ : দি ম্যান বিহাইন্ড হিজ পোয়েট্রি<ref name="অনন্য সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী"/><ref name=Rabindranath>Devi, Maitreyi (১৯৭৩)। Rabindranath--the man behind his poetry। Sudhir Das at Nabajatak Printers। </ref>। তার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ন হন্যতে পাঠক মহলে তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসে।১৯৭৫ সালে ভারতীয় লেখিকা সংঘ "ন হন্যতে" ( ইংরেজি, It Does Not Die: A Romance) উপন্যাসের জন্য তাকে সম্মানসূচক পদক দেয়। 'ন হন্যতে' মানে 'যাকে বিনাশ করা যায় না'। এই বইতে তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন বোধ, ইংরেজ শাসনামলে ভারতের সমাজ ব্যবস্থা এবং জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেন। এই বইটির জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। বইটি ইংরেজি ভাষায় ইট ডাজ নট ডাই নামে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়।<ref>গাজী সাইফুল ইসলাম (ডিসেম্বর ৪, ২০১৪)। "মৈত্রেয়ী দেবীর উপন্যাস 'ন হন্যতে'"যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬ </ref>

সমাজসেবাসম্পাদনা

১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যান৷ সোভিয়েট ইউনিয়ন তাকে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী পদকে ভূষিত করে। মৈত্রেয়ী দেবী সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ ও আমেরিকাতে রবীন্দ্রনাথের ওপরে ও শান্তির সমস্যা বিষয়ক বহু ভাষণ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালীন 'কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব কমিউনাল হারমনি' সংস্থা স্থাপন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এছাড়া এই সময়ে তিনি কলকাতা থেকে ২৪ মাইল দূরে বাদু নামক গ্রামে একটি ৯ বিঘা জমি জুড়ে কৃষি, মীন পালন, মৌ পালন, গো পালন, হাঁস কুকুর পালনের সাথে শরণার্থী শিবিরের অনাথ শিশুদের জন্য 'খেলাঘর' নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার দেখাশুনা করেন।<ref name="বরিশালের প্রয়াত গুণীজন"/>

মৃত্যুসম্পাদনা

তিনি ১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

গ্রন্থতালিকাসম্পাদনা

কাব্যগ্রন্থ

  • উদিত (১৯৩০)
  • চিত্তছায়া

উপন্যাস

  • ন হন্যতে

গল্পগ্রন্থ

  • বিধি ও বিধাতা
  • এত রক্ত কেন
  • ঋগ্বেদের দেবতা ও মানুষ
  • হিরণ্ময় পাখি
  • আদিত্য মারীচ

ভ্রমণকাহিনী

  • অচেনা চীন
  • মহাসোভিয়েত
  • চীনে ও জাপানে

রবীন্দ্র বিষয়ক

  • মংপুতে রবীন্দ্রনাথ (১৯৪২)
  • টেগোর বাই ফায়ারসাইড
  • স্বর্গের কাছাকাছি
  • কবি সার্বভৌম
  • বিশ্বসভায় রবীন্দ্রনাথ
  • রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে
  • রবীন্দ্রনাথ : দি ম্যান বিহাইন্ড হিজ পেয়েট্রি

পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

<references group=""></references>

বহিঃসংযোগসম্পাদনা