জয় গোস্বামী
জয় গোস্বামী | |
---|---|
জয় গোস্বামী | |
জন্ম | ১৯৫৪ রানাঘাট, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | সাংবাদিকতা, কবি |
পরিচিতির কারণ | কবিতা, সাহিত্য |
স্বাক্ষর | |
![]() |
জয় গোস্বামী (নভেম্বর ১০, ১৯৫৪) বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন আধুনিক বাঙ্গালী কবি।<ref>"FIR registered against Aparna Sen"। The Hindu। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১০।</ref> ভারতীয় পশ্চিম বাংলার এই কবি বাংলা ভাষার উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হিসাবে পরিগণিত। তার কবিতা চমৎকার চিত্রকল্পে, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষায় ঋদ্ধ। তিনি দুবার আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন। তার কবিতার একটি বিখ্যাত পংক্তি ‘‘অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে / হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে'’’।
জীবনী[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]
জয় গোস্বামীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা মধু গোস্বামী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী রাজনীতি করতেন। তাঁর যখন আট বছর পাঁচ মাস বয়স তখন পিতৃহারা হন। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। প্রথম কবিতা লিখেছিলেন ১৩-১৪ বছর বয়সে। নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন ১৬-১৭ বছর বয়সে। তিনি ছেলেবেলা থেকে খুব গান শুনতেন। গানের সুর থেকে বাণী তাঁকে খুব আকর্ষণ করতো। এ আকর্ষণেই তার অন্তর্জগতে কবিতার জন্ম হতে থাকে। ছেলেবেলায় এক অনুষ্ঠানে বনলতা সেন কবিতাটির আবৃত্তি শুনে কবিতার গঠন, রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার প্রথাগত ধারণা আমূল বদলে যায়।<ref name="kalerkantho.com">বাংলাদেশের কালের কণ্ঠ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকার</ref>
জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সত্তরের দশকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
জয় গোস্বামীর ভাষায়, ‘‘আমার প্রতিদিনের জীবনে মনের ভেতর যে ভাষা জন্মায়, যে অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়, তাকে ভাষা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’ তিনি আরো বলেন, “আমার জীবন হচ্ছে ধারাবাহিক বিচ্ছেদের মালা গাঁথার ইতিহাস। আমার মাস্টার মশাই, আমার মা, আমার ভাই, আমার বন্ধু, নারী, সহকর্মী, যাঁরা আমার জীবনে এসেছেন, তাঁরা কেউ আমাকে নিয়ে সুখী নন। তাঁরা কোনো না কোনো কারণে হতাশ বা আমাকে নিয়ে ক্লান্ত।” তার প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শঙ্খ ঘোষ।<ref name="kalerkantho.com"/>
প্রকাশিত বই[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]
তার প্রথম কবিতার বই 'ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ' প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে।এটি ছিল মাত্র আটটি কবিতার একটি ক্ষীণতনু কবিতা-সংকলন। মায়ের থেকে টাকা নিয়ে তিনি এই বইটির প্রকাশনা বাবদ মোট ১৪৫ টাকা ব্যয় হয়েছিল। মায়ের টাকাতেই ১৯৭৮-এ তিনি প্রকাশ করেছিলেন ২য় কাব্যগ্রন্থ প্রত্নজীব। অতঃপর কবি শঙ্খ ঘোষ তাকে প্রকাশক জুটিয়ে দেন এবং ১৯৮১-তে তার তৃতীয় কাব্য আলেয়া হ্রদ প্রকাশিত হয়।
কবিতা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]
- ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ (১৯৭৬)
- আলেয়া হ্রদ (১৯৮১)
- উন্মাদের পাঠক্রম (১৯৮৬)
- ভূতুমভগবান (১৯৮৮)
- ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? (১৯৮৯)
- আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো
- বজ্র বিদ্যুৎ ভর্তি খাতা (১৯৯৫)
- ওঃ স্বপ্ন (১৯৯৬)
- পাগলী, তোমার সঙ্গে (১৯৯৪)
- পাতার পোষাক (১৯৯৭)
- বিষাদ (১৯৯৮)
- যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল (১৯৯৮)
- মা নিষাদ (১৯৯৯)
- সূর্য পোড়া ছাই (১৯৯৯)
- জগৎবাড়ি (২০০০)
- কবিতাসংগ্রহ ১-৬
- প্রেতপুরুষ ও অনুপম কথা (২০০৪)
- দু' দন্ড ফেয়ারমত
- সনতানসন্ততি
- হরিণের জন্যে একক
- আমরা সেই চারজন
- একান্নবর্তী
- গরাদ , গরাদ
- নিশ্চিহ্ন
- পড়ন্ত বেলার আলো
- প্রাণহারা সন্দেশ
- প্রায় শস্য
- বিষ
- মায়ের সামনে স্নান করতে লজ্জা নেই
- সপাং সপাং
- তোমাকে ,আশ্চর্যময়ী (১৯৯৯)
উপন্যাস ও অন্যান্য[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]
- হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ (১৯৯৪)
- মনোরমের উপন্যাস (১৯৯৪)
- সেইসব শেয়ালেরা (১৯৯৪)
- সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা (১৯৯৫)
- রৌদ্রছায়ার সংকলন (১৯৯৮)
- সংশোধন বা কাটাকুটি (২০০১)
- সাঁঝবাতীর রূপকথারা (২০০১)
- দাদাভাইদের পাড়া
- ব্রহ্মরাক্ষস
- সব অন্ধকার ফুলগাছ
- এক প্রৌঢ়ের জবানবন্দি
- গোসাইবাগান ১-৩
পুরস্কারসমূহ[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]
- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি থেকে অনিতা-সুনিল বসু পুরস্কার
- আনন্দ পুরস্কার (১৯৯০), (১৯৯৮)
- সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার (২০০০)
- ভারতীয় ভাষা পরিষদ (২০১০)
- রচনা সমগ্র পুরস্কার (২০১১)
- বঙ্গবিভূষণ (২০১২)<ref>"Calcutta : Look"। The Telegraph (Kolkata)। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১০।</ref>