শৈবাল ক্লোরোফিলবহনকারী সরল প্রকৃতির স্বভোজী (autotrophic) অতি প্রাচীন এক উদ্ভিদদল। এদের উদ্ভব সমুদ্রের পানিতে, আজ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে। সেই আদিমকাল থেকেই শৈবাল prokaryotic থেকে eukaryotic আকৃতিতে রূপ ও বৈচিত্র্য লাভ করেছে। প্যালিওজোয়িক যুগের শুরু থেকে অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৫০০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত এরা সমুদ্রে একক আধিপত্য অটুট রেখেছিল। আজও সমুদ্রের প্রধান উদ্ভিদ এই শৈবাল। এদের দেহ কাঠামো সরল এবং মূল, কান্ড ও পত্রে পৃথকীভূত নয়। অবশ্য বড় বড় সামুদ্রিক আগাছা মূল, কান্ড ও পাতা সদৃশ কাঠামোয় বিভাজ্য হতে পারে, আর এগুলির অভ্যন্তরীণ কাঠামোও সরল নয়। শৈবাল অভাস্কুলার (nonvascular), হরিৎ ও অন্যান্য কণাধারী উদ্ভিদ, যাদের যৌনাঙ্গ এককোষী এবং সেগুলি বন্ধ্যা কোষ দ্বারা বেষ্টিত নয়। নিষেককালে শৈবালে কোন ভ্রুণসৃষ্টি হয় না, জীবনচক্রে নেই কোন প্রটোনেমা। তবে ব্যতিক্রম আছে এবং তা মেলে সবুজ শৈবাল Charales বর্গে। আরেকটি ব্যতিক্রমও উলেখযোগ্য, কোন কোন শৈবাল বর্ণহীন, মৃতজীবী বা যথার্থ পরজীবী।
শৈবালের আছে নানারূপ- এককোষী, বহুকোষী, ফ্লাজেলাবিশিষ্ট সুতার মতো, শাখায়িত বা শাখাহীন; রঙের বৈচিত্র্যও অন্যন্য। এদের অধিকাংশই আণুবীক্ষণিক, কতক বিশাল আকারের; দৈর্ঘ্য হয় ০.৫ মাইক্রোমিটার থেকে ৫০-৬০ মিটার পর্যন্ত। প্রকৃতিগতভাবে বহুজাতিক (polyphyletic) বিধায় বিভিন্ন বর্গ রঞ্জককণা, ফ্লাজেলার গড়ন (অবস্থান ও বিন্যাস), সালোকসংশেষের সঞ্চয়বস্ত্ত ও কোষপ্রাচীরের কাঠামোর নিরিখে পরস্পর থেকে বিভিন্ন বর্গে পৃথকীকৃত হতে পারে। এজন্য শৈবালরা একটিমাত্র উচ্চতর শ্রেণিবিন্যাসগত শাখাভুক্ত নয়, বরং কয়েকটি সুস্পষ্ট শাখায় শ্রেণিবদ্ধ, যার সংখ্যা আজও চূড়ান্ত হয় নি।
শৈবাল দেখা যায় সর্বত্র এবং এদের অনেকই বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এগুলি প্রধানত জলজ; স্বাদুপানিতে (পুকুর, ডোবা, হ্রদ, ধানক্ষেত, নদী, বিল ও হাওর), স্বল্পলবণাক্ত পানিতে, যেমন সুন্দরবনের লবণাক্ত মোহনা এবং সমুদ্রে এদের প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়। মাটির উপরে বা নিচে (স্থলজ), অথবা অন্যস্থানে, যেমন গাছের গুঁড়ি, দালানের প্রাচীর, শিলা ও পাথর, টিন, ধাতু-খুঁটি ইত্যাদি (অর্ধবায়ব) স্থানেও শৈবাল জন্মে।
বাংলাদেশে স্বাদুপানি, স্বল্পলবণাক্ত পানি ও সমুদ্রে বিপুল সংখ্যক শৈবাল প্রজাতির বাস। এগুলিতে রয়েছে Cyanophyceae, Chlorophyceae, Charophyceae, Euglenophyceae, Rhodophyceae, Bacillariophyceae, Chrysophyceae, Xanthophyceae ও Chloromonadinae-এর পানির তলার ও ভাসমান দুই ধরনের প্রজাতিই। এছাড়া আছে স্থলজ ও অর্ধ-বায়বীয় সদস্যরাও।